বাবা! যাদের শেখালে বুলি তারাই চালাল গুলি
লিখেছেন লিখেছেন একপশলা বৃষ্টি ০৯ আগস্ট, ২০১৪, ০৩:১৩:৩৫ দুপুর
সকাল হলেই মানুষের আসা শুরু হয়। চা-নাস্তার আয়োজন তখন থেকেই। রাত অবধি সরগরম বৈঠকখানা। মাঝে ক্লাসের বাড়ির ঝামেলা বিদ্যালয়ে স্থানান্তরিত হয় -এই যা। নানাজনের নানা সমস্যা। পারিবারিক, জমিজমা, মামলা-মোকদ্দমা -একেকজনের একেক সমস্যা। তুমিই মধ্যমণি। আন্তরিক-সমব্যধি হৃদয়ের কথাগুলি সবারই প্রশান্তি যোগায়। বন্ধু-শত্রু সবাই আসে। তুমি ভুলে যাও, কদিন আগেই যে লোকটি তোমার সমালোচনা করেছে। আমরা মেনে নিতে পারি না। বলি, এবার একটা উচিৎ শিক্ষা দেবার সুযোগ এসেছে। তুমি বল, লোকটা বিপদে পড়ে এসেছে, সে নিশ্চয়ই লজ্জিত। বিপদে সহযোগিতা করাই মনুষত্বের পরিচয়।
তুমি সহযোগিতা কর। আমরা মেনে নিতে পারি না। তবু সহযোগিতা কর।
গ্রাম্য বিচারে তুমিই প্রধান বিচারপতি। এখানেও আদালত পাড়ার ছোঁয়া লেগেছে। টাকার খেলা শুরু হয়ে গেছে! কিন্তু তুমি নৈতিকতা বিসর্জন দাও নি। নীতির ক্ষেত্র তোমার কাছে সবাই সমান। তাই মাঝে মাঝে বন্ধুরাও আঘাত পায়। কখনও বন্ধু হয় শত্রু, কখনও শত্রু হয় বন্ধু! আমরা তোমাকে নিবৃত করতে চেষ্টা করি। তুমি হেসে বল, ভাল কাজ করলে একটু সমালোচনা হয়ই। আমরা বুঝি, কিন্তু ভয় হয়। তোমাকে নিয়ে ভয়। তোমার জীবনের ভয়।
স্বার্থপর এই সমাজ ব্যবস্থা। এখানে স্বার্থটাই মুখ্য।
একবার ভূমিহীনদের সাথে প্রভাবশালীদদের বিরোধ বাধে। জমি দখলের বিরোধ। স্বভাবতই তুমি ভূমিহীনদের পক্ষ নাও। টাকার মোহ আর জমিজমার ভাগ তোমাকে টলাতে পারেনি। ব্যর্থ ভূমি ধস্যুরা তোমাকে সেহের-যাদুর আশ্রয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। সব চিকিৎসাই ব্যার্থ হয়। দীর্ঘ পাঁচ বছর মৃত্যুর সাথে লড়াই করে তুমি পরাজিত হও। তবু নীতির কাছে হার মাননি।
যারা একাজ করেছে তারা তোমার ছাত্র ছিল। কিন্তু হায়েনারা সে সম্মান দিবে কেন! ওদের জমি চাই জমি! সেখানে পিতা এলেও সরিয়ে দিতে হবে। তোমাকে সরাসরি হামলা করেনি। কাপুরুষের মত গোপনে আঘাত করেছে। অদৃশ্য থেকে, অব্যর্থ আঘাত।
তুমি সঠিক ছিলে, তবু মনে হয়, এভাবে একাকি লড়াই না করলে হয়ত হায়েনারা আড়ালে থেকে তোমার উপর আঘাত করত না। হয়ত আমরা আরো কিছুদিন তোমার ছায়ায় জীবন কাটাতে পারতাম। সবই নিয়তি। আব্বু তোমায় মিস করি, খুবই মিস করি।
বিষয়: Contest_father
১১৭৫ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন